গ্রুপ- I ও গ্রুপ- II মৌলসমূহের রসায়ন

জানুয়ারী ০১, ২০২১

 


  • ক্ষার ধাতুগুলির সর্ব বহিঃস্থ স্তরে ১টি মাত্র ইলেক্ট্রন থাকে

  • মৃৎক্ষার ধাতুগুলির সর্ব বহিঃস্থ স্তরে ২টি ইলেক্ট্রন থাকে

  • ক্ষার ধাতুগুলির জারণ সংখ্যা +1

  • ক্ষার ধাতুসমূহের প্রধান বিশেষত্ব হচ্ছে- এরা খুবই নরম

  • গ্রুপ I(A) এর মৌলসমূহ ক্ষার ধাতু এবং গ্রুপ II(A) এর মৌলসমূহ মৃৎক্ষার ধাতু

  • পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে ক্ষার ধাতুসমূহের ধাতব ব্যাসার্ধ ও আয়নিক ব্যাসার্ধ বাড়ে

  • সোডিয়াম ক্লোরাইডের গলনাংক- 819ᵒC

  • NaCO3-র জলীয় দ্রবণ ক্ষারধর্মী

  • একই শ্রেণীর উপর হতে ক্রমান্বয়ে নিচের দিকে অগ্রসর হলে আয়নিকরণ শক্তির মান কমে যায়

  • ব্রাইনের তড়িৎ বিশ্লেষণে অ্যানোডে ক্লোরিন এবং ক্যাথোডে হাইড্রোজেন উৎপন্ন হয়

  • গ্রুপ-II ধাতুর হাইড্রক্সাইডের দ্রাব্যতার ক্রম- Mg(OH)2 < Ca(OH)2 < Sr(OH)2 < Ba(OH)2

  • জিংক অক্সাইডকে ফিলসফার উল বলে

  • জিংক অক্সাইড একটি উভধর্মী অক্সাইড

  • পেট্রোল জ্বালানির অ্যান্টি-নক প্রস্তুতিতে সোডিয়াম ব্যবহৃত হয়

  • অতীব শক্তিশালী বিজারক রূপে এবং কতিপয় ধাতু সংকর (সোডিয়াম অ্যামালগাম) প্রস্তুতিতে সোডিয়াম ধাতু ব্যবহৃত হয়

  • সাবান, কাগজ ও কৃত্তিম রেশম তৈরিতে কস্টিক সোডা ব্যবহৃত হয়

  • বিভিন্ন বস্তুকে বর্ণহীন করার জন্য এবং জীবাণুনাশক হিসাবে সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট ব্যবহৃত হয়

  • সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইটের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার হচ্ছে- কাগজের মণ্ডকে বর্ণহীন করা

  • শিখা পরীক্ষায় সোডিয়াম (Na) উজ্জ্বল সোনালি হলুদ বর্ণ দেয়

  • শিখা পরীক্ষায় পটাশিয়াম (K) বেগুনি এবং সিজিয়াম নীল বর্ণ দেয়

  • শিখা পরীক্ষা ক্যালসিয়াম (Ca) ইটের ন্যায় লাল বর্ণ প্রদর্শন করে 

  • প্যারিস প্লাস্টার (CaSO4)2.H2O প্রস্তুতি :

 জিপসাম আকরিককে 120ᵒC তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করলে প্যারিস প্লাস্টার পাওয়া যায়।

 2(CaSO4.2H2O)→(CaSO4.2H2O)+3H2O

 

  • বিভিন্ন যৌগের নাম ও সংকেত :

নাম

সংকেত

কাপড় কাচা সোডা

Na2CO3.10H2O

রক সল্ট

NaCl

সোডা অ্যাশ

Na2CO3

জিপসাম

CaSO4.2H2O

সাদা ভিট্টিয়ল

ZnSO4.7H2O

ডলোমাইট

CaCO3.MgCO3

চুনের পানি

Ca(OH)2

কুইক লাইম

CaO

ব্লিচিং পাউডার

Ca(OCl)Cl

 

 

  1. বিভিন্ন মৌলের উৎস : 

  • সোডিয়াম :

১. রক সল্ট- NaCl

২. চিলি সল্ট পিটার- NaNO3

৩. ন্যাট্রোন- Na2CO3.H2O

৪. বোরাক্স- Na2B4O7.10H2O

 

  • পটাশিয়াম :

১. সিলভাইন- KCl

২. নাইটার- KNO3

৩. কার্নালাইট- KCl.MgCl2.6H2O

৪. ফেলসপার- K2O.Al2O3.6SiO2

৫. ক্যানাইট- MgSO4.KCl.3H2O

 

  • ক্যালসিয়াম :

১. চুনাপাথর- CaCO3

২. অ্যানহাইড্রাইট- CaSO4

৩. জিপসাম- CaSO4.2H2O

৪. ফসফরাইট- Ca3(PO4)2

৫. ডলোমাইট- CaCO3.MgCO3

৬. ফ্লোর অ্যাপাটাইট- CaF2.3Ca(PO4)­2

 

ম্যাগনেসিয়াম :

১. ম্যাগনেসাইট- MgCO3

২. ডলোমাইট- MgCO3.CaCo3

৩. ডিসেরাইট-MgSO4.H2O

৪. কার্নালাইট- KCl.MgCl2

৫. ইলসোমাইট- MgSO4.7H2O

৬. ক্যানাইট- MgSO4KCl3

৭. অ্যাসবেস্টস- Mg3Ca(SiO3)4

 

 

  1. কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিক্রিয়া :

  • উত্তাপে লিথিয়াম নাইট্রেট বিযোজিত হয়ে লিথিয়াম অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড ও অক্সিজেন উৎপন্ন করে।

4LiNO 2Li2O+4NO2+O2

 

  • সিলিকার সাথে সোডিয়াম কার্বনেটকে উত্তপ্ত করে সোডিয়াম সিলিকেট বা পানি কাঁচ উৎপন্ন করে।

Na2CO3+SiO2→Na2SiO3+CO2

 

  • ব্লিচিং পাউডার লঘু HCl এর সাথে বিক্রিয়া Cl2 করে গ্যাস উৎপন্ন করে।

Ca(OCl)Cl+2HCl→CaCl2+H2O+Cl2

 

  • জিপসাম আকরিককে তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করলে প্যারিস প্লাস্টার পাওয়া যায়।

2(CaSO4.2H2O)  (CaSO)­2­.HO+3H2O

 

 

  1. কিছু উল্লেখযোগ্য খনিজ :

ম্যাগনেসাইট

MgCO3

ডলোমাইট

MgCO3.CaCO3

কিসেরাইট

MgSO4.H2O

চুনাপাথর

CaCO3

অ্যানহাইড্রাইট

CaSO4

জিপসাম

CaSO4.2H2O

ফসফেরাইট

Ca3(PO4)2

বেরাইট

BaSO4

 

 

  1. সোডিয়ামের প্রধান আকরিকসমূহ :

খাদ্য লবণ/ রক সল্ট

NaCl

ন্যাট্রোন

NaCO3.H2O

ট্রোনা

NaCO3.2NaHCO3.3H2O

সোহাগা

Na2B4O7.10H­2O

চিলি সল্ট পিটার

NaNO3

ক্রায়োলাইট

AlF3.NaF

 

 

  1. কিছু বিশেষ তথ্য :

১. Na ধাতু অত্যন্ত সক্রিয় বলে বাতাসের জলীয় বাষ্পের সাথে তীব্র বিক্রিয়া করে যাতে আগুন ধরে যেতে পারে। তাই Na ধাতুকে কেরোসিনের নিচে রাখা হয়।

২. গ্রুপ IA-এর ধাতুগুলোর দুটি অদ্রবণীয় লবণ হল Na পাইরো এন্টিমোনেট (Na2H2Sb2O7) এবং ডাই-পটাশিয়াম কোবাল্ট নাইট্রাইট K2Na[Co(NO2)6]

৩. NaCl ও CaCOI এর মিশ্রণকে বিরঞ্জক মিশ্রণ বলে

৪. সুইমিং পুলে দুর্গন্ধ দূরীকরণে 10% NaOCl ব্যবহৃত হয়

৫. উন্নত দেশে ব্লিচিং পাউডারের পরিবর্তে NaOCl ব্যবহৃত হয়

 

  1. কতিপয় লবণের বর্ণ :

যৌগ

বর্ণ

LiCl, NaCl, KNO3, Na2SO4, Na3PO4, Na2CO3

সাদা

Na2CrO4, K2Cr2O7

কমলা

KMnO4

গোলাপী/ বেগুনি

 

 

  1. ভৌত ধর্মাবলী :

১. প্রকৃতি : গ্রুপ I এর অন্তর্ভুক্ত সকল মৌলই ধাতু

২. বর্ণ : এ ধাতুগুলো দেখতে রূপার মত সাদা। তবে বায়ুতে রাখলে সাদা রং নষ্ট হয়ে যায়।

৩. ধাতব বন্ধন প্রকৃতি : গ্রুপ I মৌলের পরমাণুর বহিঃস্তরে একটি মাত্র যোজ্যতা ইলেক্ট্রন(ns1) থাকায় এরা দুর্বল ধাতব বন্ধন গঠন করে। গ্রুপ II মৌলগুলোর বহিঃস্তরের শেলে দুটি ইলেক্ট্রন (ns2) আছে বলে এসব ধাতুতে ধাতব বন্ধন তুলনামূলক দৃঢ় হয়।

৪. নমনীয়তা : ধাতব বন্ধন দুর্বল হওয়ায় এ ধাতুগুলো নরম; এতই নরম যে ছুরি দিয়ে কাটা যায়।

৫. পারমাণবিক ও আয়নিক আকার : সাধারণত পর্যায় সারণীর যে কোন গ্রুপের উপর থেকে নিচের দিকে ক্রমান্বয়ে পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বৃদ্ধি পায়।

৬. ঘনত্ব : গ্রুপ I-র ধাতুগুলোর পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। যদিও সোডিয়ামের চেয়ে পটাশিয়াম হালকা। গ্রুপ II-র ক্ষেত্রে Be থেকে Ca পযন্ত প্রথমে ঘনত্ব কমে এবং তারপর Ra পযন্ত মান পরমাণুর ক্রমাঙ্কের সাথে বৃদ্ধি পেতে থাকে।

৭. গলনাংক ও স্ফুটনাংক : ক্ষার ধাতুগুলোর গলনাংক ও স্ফুটনাংক পারমাণবিক সংখ্যার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে থাকে। যেমন- Li থেকে Cs পযন্ত গলনাংক 180ᵒC থেকে 28ᵒC এবং স্ফুটনাংক 1330ᵒC থেকে 690ᵒC হ্রাস পায়।

৮. আয়নিকরণ শক্তি : গ্রুপ I ও II মৌলসমূহের ক্ষেত্রে যতই নিচের দিকে যাওয়া যায় ততই মৌলসমূহ সক্রিয় হয়।

৯. রাসায়নিক সক্রিয়তা : গ্রুপ IA ও IIA মৌলসমূহের ক্ষেত্রে যতই নিচের দিকে যাওয়া যায় ততই মৌলসমূহ সক্রিয় হয়।

১০. সক্রিয়তা ক্রম :

Cs > Rb > K > Na > Li

Ba > Ra > Ca > Mg > Be

 

  1. কিছু গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন প্রণালী :

Na ধাতু নিষ্কাশন

১. ডাউন প্রণালী

২. কাস্টনার প্রণালী

NaOH উৎপাদন

১. Na2CO3 হতে ক্ষারীকরণ পদ্ধতি

২. গাঢ় NaCl হতে তড়িৎ বিশ্লেষণ পদ্ধতি

Na2CO3 উৎপাদন

১. সলভে পদ্ধতি

২. লে-ব্ল্যাংক পদ্ধতি

৩. বৈদ্যুতিক পদ্ধতি

Na ক্লোরেট বা Na হাইপোক্লোরেট উৎপাদন

(i) 2NaOH+Cl2→2NaOCl+H2O

(ii) NaCl(aq)+[O] NaOCl(aq)

 

(iii) 2NaOH(aq)+Cl2(g)→NaCl+NaOCl+H2O

 

 

  1. NaOCl-র ধর্ম :

১. সোডিয়াম হাইপোক্রোরাইট তেমন সুস্থিত নয়। অল্প তাপে ভেঙে গিয়ে ক্লোরেট ও ক্লোরাইড রূপান্তরিত হয়।

3NaOCl  NaClO3+2NaCl

এ জন্যই এটি প্রস্তুতের সময় শীতল দ্রবণ ব্যবহার করা হয়।

২. একটি শক্তিশালী জারক।

NaOCl→NaCl+[O]

 

 

  • ব্লিচিং পাউডার : ক্যালসিয়াম ক্লোরো হাইপোক্লোরাইটকে [Ca(OCl)Cl] ব্লিচিং পাউডার বলে। 40ᵒC উষ্ণতায় উত্তপ্ত শুষ্ক কলিচুনের মধ্যে ক্লোরিন চালনা করলে ব্লিচিং পাউডার উৎপন্ন হয়।

     Ca(OH)2+Cl2→Ca(OCl)Cl+H2O

 

 

  1. সলভে পদ্ধতি বা সোডা পদ্ধতি :

  • মূলনীতি : এ পদ্ধতিতে NaCl থেকে সোডা অ্যাশ (Na2CO3) প্রস্তুত করা হয়। গাঢ় NaCl দ্রবণকে প্রথমে NH গ্যাস দ্বারা সম্পৃক্ত করা হয় এবং পরে এতে CO2 গ্যাস চালনা করলে NH4HCO3 উৎপন্ন হয়। শেষে NH4HCOএবং NaCl পরস্পরের সাথে বিক্রিয়া করে কম দ্রবণীয় NaHCO3 ও NaCl উৎপন্ন করে। অধঃক্ষিপ্ত NaHCO3-কে ছেঁকে 180ᵒC এ ভস্মীভূত করলে এটি বিয়োজিত হয়ে Na2CO3-এ পরিণত হয়।

                  NH3+H2O → NH4OH

                  2NH4OH+CO2 → (NH4)2CO3+H2O

                  (NH4)2CO3+CO2+H2O → 2NH4HCO3

                  NaCl+NH4HCO⇋ NaHCO3+NH4Cl

                  2NaHCO3 Na2CO3+H2O+CO2

 

  • প্রয়োজনীয় কাঁচামাল :

     ১. ব্রাইন

     ২. NH3

     ৩. চুনাপাথর