তো আরো জটিল। এরপরও বাচ্চাদের আগ্রহে একটু বোঝার চেষ্টা করেন। এখন আনজুমের কাছে এই গল্প শুনলে আরো বেশি ভালো লাগবে, ভাবলেন তিনি। বললেন— আচ্ছা ভাবি,কারেন্ট জিনিসটা কী ? আনজুম খুশি হয়ে বললেন— কারেন্ট হলো স্রোত। না না, আমি নদীর কথা বলছি না। আমিও নদীর কথা বলছি না। তাহলে ? ইলেকট্রিক কারেন্ট হলো ইলেকট্রনের স্রোত। স্থিরতড়িত্ আর চলতড়িত্, আপনার তো মনে আছে বৌদি। হ্যাঁ। মনে আছে —বললেন কমলা। সেই স্থির ইলেকট্রনের প্রভাব হলো স্থিরতড়িত্, আর চলমান ইলেকট্রনের স্রোত হলো চলতড়িত্। ধাতব পদার্থে কিছু মুক্ত ইলেকট্রন থাকে যারা ঐ পদার্থের মধ্যে মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াতে পারে। দুটি ভিন্ন বিভবের বস্তুকে তার দিয়ে যুক্ত করে দিলে নিম্ন বিভব থেকে উচ্চ বিভবে ইলেকট্রন চলতে থাকে। এটা কি চলতেই থাকে ? বললেন
কমলা। আকাশ আর অণু চেয়ে দেখছে। অণু ভাবছে— মা আজকে ফিজিক্সে মজা পেয়েছে। আনজুম বললেন— দুটোর বিভব সমান না হওয়া পর্যন্ত ইলেকট্রনের স্রোত চলতে থাকে। আকাশ বললো— এর কোনো হিসাব বা পরিমাণ নেই ? আছে। কোনো পরিবাহীর মধ্যদিয়ে এক সেকেন্ডে যদি এক কুলম্ব চার্জ যায় তবে ঐ পরিবাহীতে এক অ্যাম্পিয়ার তড়িত্ প্রবাহিত হয়। কমলা বললেন— এখন বললেন ইলেকট্রনের প্রবাহ, আবার বলেন যদি চার্জ এক কুলম্ব যায়। হ্যাঁ, ইলেকট্রনের চার্জই তো কুলম্ব। এক কুলম্ব চার্জ হতে হলে অনেকগুলো ইলেকট্রন লাগবে। প্রায় টি। বুঝলাম না —
বললেন কমলা। মানে হলো —আকাশ বুঝিয়ে দিচ্ছে, এক অ্যাম্পিয়ার হচ্ছে কোনো তারের মধ্যদিয়ে সেকেন্ডে টি ইলেকট্রন চলাচল করছে।আচ্ছা, এই যে ইলেকট্রন তারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, আমরা তো দেখতে পাচ্ছি না, তার বাধা দিচ্ছে না ? হ্যাঁ, ভালো কথা বলেছেন। ইলেকট্রনের স্রোত পরিবাহকের মধ্যদিয়ে চলার সময় পরিবাহকের অভ্যন্তরের অণু-পরমাণুর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ফলে এর গতি বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং তড়িত্প্রবাহ বিঘ্নিত হয়। বাধা দেবার এই ধর্মকে পদার্থের রোধ বলা হয়। রোধের
একক কী আন্টি ? বললো কণিকা। ওহম। কোনো পরিবাহকের দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্য এক ভোল্ট হলে এবং এর মধ্যদিয়ে এক অ্যাম্পিয়ার বিদ্যুত্ প্রবাহিত হলে যে বাধার সৃষ্টি হয়, সেই বাধার পরিমাণ এক ওহম। ওহম নিশ্চয়ই একজন বিজ্ঞানীর নাম ? বললো চন্দ্রা। হ্যাঁ। জর্জ সাইমন ওহম। তিনি ইটালির বিজ্ঞানী। তড়িত্প্রবাহ সম্পর্কিত তাঁর একটি সূত্রও আছে, ওহমের সূত্র। স্থির তাপমাত্রায়
কোনো নির্দিষ্ট পরিবাহকের মধ্যদিয়ে যে তড়িত্ প্রবাহিত হয়, তা ঐ পরিবাহকের দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্যের সমানুপাতিক। তাহলে তো একটা ধ্রুবক দিয়ে সমানুপাতকে সমান বানানো যায় —বললো অণু। হ্যাঁ। ঐ ধ্রুবকটিই পদার্থের রোধ। প্রত্যেক পদার্থেরই কি রোধ থাকে ? হ্যাঁ, কমবেশি সকল পদার্থের রোধ থাকে। যে পদার্থের রোধ বেশি, তার মধ্যদিয়ে কারেন্ট কম যাবে, আর যে পদার্থের রোধ কম তার মধ্যদিয়ে কারেন্ট বেশি যাবে। তবে শর্ত হলো তাপমাত্রা স্থির থাকতে হবে। তাপমাত্রা
স্থির না থাকলে কী হবে ? বললো আকাশ। তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে কোনো পরিবাহীর রোধ বাড়তে থাকবে। এরও একটা হিসাব আছে। একটা ধ্রুবকও আছে। এর নাম রোধের উষ্ণতাসহগ বা রোধের উষ্ণতাগুণাংক। এটি কী রকম ? বললো আকাশ। ধরো কোনো পরিবাহকের রোধ সেলসিয়াসে এক ওহম। এর তাপমাত্রা বাড়ালে রোধ যতটুকু বাড়বে, সেটিই এই পদার্থের রোধের উষ্ণতাসহগ বা
উষ্ণতাগুণাংক। এর একক হলো পার ডিগ্রি সেলসিয়াস বা পার ডিগ্রি কেলভিন। পার কেন ?
বললো চন্দ্রা। পার মানে প্রতি ডিগ্রিতে। যেমন ধরো টাংস্টেন এর রোধের উষ্ণতাগুণাংক এর
মানে হলো তাপমাত্রার এক ওহম রোধের টাংস্টেন তারের তাপমাত্রা বাড়লে এর রোধ
ওহম বেড়ে যাবে। রোধের উষ্ণতা সহগের মান ধনাত্মক বা ঋণাত্মক হতে পারে। ধনাত্মক
মানের পরিবাহীর ক্ষেত্রে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে রোধ বেড়ে যায়। আর যে সব পরিবাহীর
রোধের উষ্ণতাগুণাংকের মান ঋণাত্মক, তাদের ক্ষেত্রে তাপমাত্রা বাড়লে রোধ কমে যায়। কিছু
কিছু পরিবাহী আছে, যাদের রোধ অতি নিম্ন তাপমাত্রায় শূন্য হয়ে যায়। রোধ শূন্য হয়ে যায়
মানে তড়িত্প্রবাহে কোনো বাধাই দিতে পারে না ? প্রশ্ন করলো আকাশ। প্রায় এরকমই।
বললেন আনজুম। এদেরকে অতিপরিবাহী বা সুপার কন্ডাক্টর বলে। একটু থেমে আনজুম বললেন—
রোধের আবার সমবায় আছে। সমবায় সমিতি ? বললেন কমলা। সমবায় সমিতি না, তবে ধারণাটা
মোটামুটি এরকমই। একটা রোধ লাগিয়ে যদি আমাদের কাজ না চলে, তাহলে আমরা
প্রয়োজনে একাধিক রোধ লাগিয়ে ফেলি। একে বলি রোধের সমবায়। ঠিক যেমন কোনো কাজ
একজন মানুষের দ্বারা সম্ভব না হলে মানুষ সংঘবদ্ধ হয়ে সমবায় সমিতি গড়ে তোলে, সেই
রকম। মজার তো ! বললো সীমা। হ্যাঁ, ঐ সমবায়ের রোধকে বলা হয় তুল্যরোধ —বললেন
আনজুম। সমবায় আবার তিন রকমের। শ্রেণিসমবায় বা অনুক্রমসমবায়, সমান্তরালসমবায়, আর এই দুটো মিলিয়ে মিশ্রসমবায়। এইগুলো কী রকম ? বললো রেখা। কোনো বর্তনিতে একটা রোধের ডান
পাশে আরেকটা এরপর আরেকটা এভাবে লাগালে যে সমবায় একে বলে শ্রেণিসমবায়  শ্রেণিসংযোগ বা অনুক্রমসমবায়। আবার সবগুলো রোধের বামপ্রান্ত এক বিন্দুতে আর ডানপ্রান্ত আরেক বিন্দুতে এভাবে লাগালে যে সমবায়, তাকে বলে সমান্তরালসমবায়। আর এই দুটো মিলিয়ে যে ব্যবস্থা, তাকে বলে মিশ্রসমবায়। এই তিন রকমের সমবায়ের পার্থক্য কী ? বললেন কমলা। পার্থক্য হলো শ্রেণিসমবায়ে লাগালে তুল্যরোধ বাড়ে, আর সমান্তরালসমবায়ে লাগালে তুল্যরোধ কমে।
মিশ্রসমবায়ে বাড়তেও পারে কমতেও পারে। কমলা মন দিয়ে শুনছিলেন। হঠাত্ মনে হলো
চুলায় ডাল বসানো আছে। তিনি বললেন—আপনারা গল্প করেন, আমি যাই।