ফ্যারাডের সূত্র ও প্রয়োগ
ফ্যারাডের সূত্র ও প্রয়োগ
১৯৩৩ সালে ফ্যারাডে ২টি সূত্র প্রণয়ন করেন-
প্রথম সূত্র : দ্রবণে বা গলিত অবস্থায় কোন তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত করলে বিয়োজনের পরিমাণ তথা ইলেক্ট্রোডে দ্রবীভূত বা জমাকৃত পদার্থের ভর, প্রবাহিত বিদ্যুৎ আধান বা বিদ্যুৎ শক্তির পরিমাণের সমানুপাতিক।
অর্থাৎ, W α Q বা W=ZQ=ZIt
দ্বিতীয় সূত্র : যদি বিভিন্ন তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থের দ্রবণের মধ্যে একই সময়ের জন্য একই পরিমাণ তড়িৎ প্রবাহ তথা একই পরিমাণ বিদ্যুৎ চার্জ প্রবাহিত করা হয় তবে ইলেক্ট্রোডসমূহের দ্রবীভূত বা সঞ্চিত পদার্থের পরিমাণ পদার্থসমূহের তড়িৎ রাসায়নিক তুল্যাংকের সমানুপাতিক।
ফ্যারাডের সূ্ত্রের প্রযোজ্যতা :
১. ফ্যারাডের সূত্র দ্রবণ ও গলিত ইলেক্ট্রোলাইট উভয়ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য
২. ফ্যারাডের সূত্রের উপর তাপমাত্রা, চাপ, দ্রাবক ও দ্রবণের ঘনমাত্রার উপর তেমন কোন প্রভাব নেই
ফ্যারাডের সূত্রের সীমাবদ্ধতা :
১. এ সূত্র ইলেক্ট্রনীয় পরিবাহীর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায় না
২. যে সমস্ত তড়িৎ বিশ্লেষণে ১০০% তড়িৎ ইলেক্ট্রলাইটিক পদ্ধতিতে পরিবাহিত হয়, এ সূত্র শুধু সেগুলোর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য
৩. একাধিক বিক্রিয়া সংঘটিত হলে গণনায় ত্রুটি দেখা দেয়
ফ্যারাডের সূত্রের প্রয়োগ :
১. এ সূত্রের সাহায্যে ইলেক্ট্রনের চার্জ গণনা করা যায়
২. কি পরিমাণ তড়িৎ প্রবাহিত করলে কতটুকু বস্তু অ্যানোড বা ক্যাথোডের বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করবে তা ২য় সূত্রের সাহায্যে জানা যায়
1 mol একযোজী ধনাত্মক আয়নকে বিজারিত করতে 1F বিদ্যুৎ প্রয়োজন
1 mol দ্বিযোজী ধনাত্মক আয়নকে বিজারিত করতে 2F বিদ্যুৎ প্রয়োজন
1 mol ত্রিযোজী ধনাত্মক আয়নকে বিজারিত করতে 3F বিদ্যুৎ প্রয়োজন
তড়িৎ দক্ষতা : কোন তড়িৎ বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় ক্যাথোডে যে পরিমাণ মৌল জমা হয় এবং ফ্যারাডের সূত্রানুসারে যে পরিমাণ মৌল জমা হওয়ার কথা, এ দুয়ের অনুপাতকে তড়িৎ দক্ষতা বলে। যেমন, নিকেল দ্রবণের ক্ষেত্রে তড়িৎ দক্ষতা 86.48%
কোন পরিবাহীর মধ্য দিয়ে 1.0 sec সময়ের 1.0 amp তড়িৎ প্রবাহ চালনা করলে পরিবাহীর মধ্যে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ চার্জ প্রবাহিত হয় তাকে কুলম্ব বলে
১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে ফ্যারাডে প্রথম ধনাত্মক চার্জযুক্ত কণার নাম ক্যাটায়ন এবং ঋণাত্মক চার্জযুক্ত কণার নাম অ্যানায়ন দেন
তড়িৎযোজী বন্ধনযুক্ত পদার্থ দ্রবণে এবং গলিত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহন করে
তড়িৎ বিশ্লেষণ থেকে জানা যায় ক্যাথোডে 1 মোল Ag, 1 মোল Cu এবং 1 মোল Cr এর সঞ্চিত হওয়ার কালে যথাক্রমে 96500C, 2*96500C এবং 3*96500C বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ-
|
|
|
|
| প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ |
Ag+ 1 মোল |
+ | e- 1 মোল |
→ | 1 Ag মোল | 1*96500C = 1F |
Cu++ 1 মোল | 2e- 2 মোল | Cu 1 মোল | 2*96500C = 2F | ||
Cr3+ 1 মোল | 3e- 3 মোল | Cr 1 মোল | 3*96500C = 3F |
ক্যাথোড দিয়ে ইলেক্ট্রন দ্রবণে প্রবেশ করে
অ্যানোড ইলেক্ট্রন ছেড়ে দিয়ে অ্যানায়ন জারণ বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে
ক্যাথোডে ক্যাটায়ন ইলেক্ট্রন গ্রহণ করে বিজারণ বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে
বক্সাইট থেকে তড়িৎ বিশ্লেষণের সাহায্যে অ্যালুমিনিয়াম ধাতু নিষ্কাশন করা হয়
ধাতুর ক্ষয়রোধ করার জন্য ইলেক্ট্রলাইটিক পদ্ধতিতে অন্য ধাতুর প্রলেপ দেয়া হয়
ফ্যারাডের সূত্র কেবলমাত্র ইলেক্ট্রলাইটিক পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, ইলেক্ট্রনীয় পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়
একই পরিমাণ তড়িৎ যথাক্রমে লঘু H2SO4, CuSO4 এবং AgNO3 দ্রবণধারী তিনটি ভোল্টামিটারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করে 1 কুলম্ব তড়িতের জন্য ক্যাথোডে পরিন্যস্ত হাইড্রোজেন, কপার, সিলভারের হিসেব করা হয় তাহলে দেখা যাবে-
H = 0.0000104g
Cu = 31.74*0.0001036 = 0.0003292g
Ag = 107.88*0.00001036 = 0.001118g
যেহেতু এক কুলম্ব তড়িৎ দ্বারা পরিন্যস্ত পদার্থই তড়িৎ রাসায়নিক তুল্য, কাজেই রাসায়নিক তুল্য পরিমাণের পদার্থ পরিন্যস্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের পরিমাণ-
H = = 96525 কুলম্ব
Cu = = 96537 কুলম্ব
Ag = = 96494 কুলম্ব
বিশুদ্ধ পানি বিদ্যুৎ কুপরিবাহী
তড়িৎ রাসায়নিক শ্রেণীতে একাধিক ক্যাটায়নের মধ্যে যে ক্যাটায়নটি সবচেয়ে নিচে অবস্থিত, তার বিজারণ সবার আগে ঘটে
মোল প্রতি 96500 কুলম্ব অনুপাত (Cmol-1) ফ্যারাডে ধ্রুবক নামে পরিচিত
ফ্যারাডের প্রথম সূত্রের গাণিতিক রূপ, W=ZIT
তামার তড়িৎ বিশ্লেষণে 99.95% বিশুদ্ধ তামা পাওয়া যায়
Ag-তড়িৎ রাসায়নিক তুল্যাংক = 0.001118
O-তড়িৎ রাসায়নিক তুল্যাংক = 0.0000829
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন